আজ শনিবার, ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সবাই রাজা!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার ফলে দলটির সাংগঠনিক শক্তির কোন তুলনা নেই। সমর্থক থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতা পর্যন্ত সকলের সম্মেলিত প্রচেষ্টায় দেশের মধ্যে দলটির একটি শক্ত অবস্থান তৈরী হয়েছে।

তবে সকলের সম্মেলিত প্রচেষ্টায় দলকে এগিয়ে নিলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদের কোন শেষ নেই। যেমনটা বলা চলে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। দেশের বেশিরভাগ মানুষই জানে এ জেলাটির মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দু’টি মেরু বিদ্যমান।

যার মধ্যে একটি নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান মেরু তথা উত্তর মেরু। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র আইভীর দক্ষিণ মেরু।

এই দুই মেরুকে কেন্দ্র করে আবার তৈরী হয়েছে একাধিক মেরু। তবে এ মেরুগুলোর কোন নাম এখানো দেয়া হয়নি তথা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে যে যার নির্বাচনী এলাকাকেই তাদের নিজ নিজ মেরু বানিয়ে ফেলেছেন। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কখনো প্রকাশ্যে কোন্দল চলে আবার কখনো ইঙ্গিতে।

অনুরুপভাবে নতুন মেরুর বেশ কিছু নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিরোধের যেনো শেষ নেই। এককথায় ‘নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সবাই রাজা’। এমনটাই মনে করেন জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

উত্তর ও দক্ষিণ মেরুকে ছাড়াই চলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। আবার বেশ কিছু নেতা উত্তর-দক্ষিণ মেরুর সাথেও জড়িত। কেউ দলের রাজনীতি করে আবার কেউ মেরুর। মূলত যে যার মতো একটি অবস্থান তৈরী করে রেখেছে। আর সেই অবস্থানেই চলছে জেলার বর্তমান রাজনীতি।

নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের নেই কোন শেষ। কিছুদিন পূর্বেও কাউন্সিলরদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে আতঙ্কিত হয়েছিলো নগরবাসী। ফতুল্লায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নামধারী আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা আজমত বাহিনীর সাথে ফতুল্লা শাখার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি মোস্তফা কামাল গ্রুপের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধাশতাধিক মানুষ আহত হয়।

সময় যত যাচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা ততই ভয়ানক হচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে একের পর এক আলোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা, চাদাঁবাজির মামলা, লুটপাটের মামলা, হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বাদ যায়নি একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রর্দশনও।

সম্প্রতি নাসিক ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিশ বাবু ১০ লাখ টাকা চাদাঁ দাবি করে। অন্যথায় ডিস ব্যবসা করতে দেয়া হবে না বলেও হুমকি প্রদান করেন তিনি। ওই ঘটনায় পরবর্তীতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই চাদাঁবাজির মামলায় বাবু এখন জেলহাজতে। এছাড়াও আরও দু’টি চাদাঁবাজির মামলা রয়েছে ডিশ বাবুর বিরুদ্ধে।

কয়েকমাস আগে ১৮ নং ওয়ার্ড এলাকায় দক্ষিণ নলুয়া পাড়া এলাকায় মসজিদের টাকার হিসেব নিয়ে দ্বন্দ্বে জের ধরে কাউন্সিলর কবির ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছিলো।

নাসিক প্যানের মেয়র ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকান্ডের শেষ নেই। এমন শতাধিক ঘটনা রয়েছে জেলার জনপ্রতিনিধিদের। বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ভালো খবরের চেয়ে খারাপ খবরই বেশি।

উত্তর মেরুর শামীম ওসমান বলয়ে থাকা একাধিক নেতাকর্মীদের নামে যেমন বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তেমনি দক্ষিণ মেরুর আইভী বলয়ে থাকা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। যে যার অঞ্চলকে ঘিরে এক একটি ঘাটি তৈরী করে রেখেছেন। কেউ যেনো কারও তোয়াক্কাই করেন না। এক কথায় তারা সবাই রাজা। কারও স্বার্থে আঘাত লাগলেই জনপ্রতিনিধি রুপ থেকে পাল্টে তারা রুপ নেয় সন্ত্রাসীর।

সচেতন মহলের মতে, জনপ্রতিনিধি বলতে জনগণের সেবককে বোঝায়। সুতরাং প্রত্যেকটি জনপ্রতিনিধির প্রয়োজন জণগনের স্বার্থে কাজ করা তাদের স্বার্থে নয়। নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিদের নামে রয়েছে অসংখ্যা অভিযোগ। মূলত আধিপত্য বিস্তারই ওই জনপ্রতিনিধিদের মূল লক্ষ্য। এভাবে চলতে থাকলে জনপ্রতিনিধিদের স্বার্থ হাসিল হবে ঠিকই কিন্তু জণগন উন্নয়ণ থেকে হবে বঞ্চিত।